হাসিনার গোপন বন্দিশালা – একটি অমানবিক ইতিহাসের জীবন্ত বর্ণনা
![]() |
ফাইল ছবি |
বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে একটি আতঙ্কের নাম – ‘আয়নাঘর’ ও শেখ হাসিনার গোপন বন্দিশালা। অন্তরালে তৈরি করা সেই বন্দিশালা ছিল এমন এক নরক, যেখানে সরকার বিরোধী কণ্ঠস্বরগুলোকে চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন।
২৫ বছর বয়সী সেই নারী – জীবনের গল্প
“আমাকে ক্রুসিফাইড হওয়ার মতো করে হাত দুটো দুই দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। ওরা আমার ওড়নাও নিয়ে নেয়। এতো নির্যাতন করে যে সঙ্গে সঙ্গে পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়।”
এই বর্ণনা শুনলেই বোঝা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্র যখন মানবতাকে পিষে ফেলে, তখন নারী, পুরুষ, শিশু – কেউ রেহাই পায় না।
হাবিব – আঙুলের যন্ত্রণা থেকে অজ্ঞান হওয়া এক তরুণের গল্প
মাত্র ২৭ বছর বয়সে ২০১৭ সালে গুম হন হাবিব। টানা ১১৩ দিন বন্দিশালায় কেটেছে তার।
“আমাকে গ্রিলের সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতো, যাতে বসতে না পারি। পা ফুলে যেত, হাত রক্তাক্ত হতো। টেবিলের ওপর হাত রেখে আঙুলে প্লাস দিয়ে চেপে ধরত, আরেকজন সুচ ঢুকাত।”
গুম কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদন
সম্প্রতি প্রকাশিত হয় ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দ্বিতীয় প্রতিবেদন। এতে উঠে আসে ২৫৩ জন গুম হওয়া মানুষের অভিজ্ঞতা। কেউ ৩৯ দিন, কেউ ৩৯১ দিন টানা বন্দি ছিলেন ‘টর্চার সেল’-এ।
বন্দিশালার নির্যাতনের ধরন
- ঝুলিয়ে রাখা
- বাঁশডলা
- বৈদ্যুতিক শক
- ওয়াটারবোর্ডিং (মুখে গামছা দিয়ে পানি ঢালা)
- নখ উপড়ে ফেলা
- উলঙ্গ করে এলোপাথাড়ি মার
- শীতে কম্বল-বালিশ না দেয়া
- হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বিছানার পাশে আটকে রাখা
অনেকেই নির্যাতনের তীব্রতায় অজ্ঞান হয়ে যেতেন, বমি করতেন, চোখ বাঁধা অবস্থায় নিজের শরীরের পোড়া মাংসের গন্ধ পেতেন।
র্যাব-২ ও সিপিসি-৩ এর হেফাজতের ভয়াবহ চিত্র
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, এই বাহিনীগুলোর হেফাজতে ছিল:
- ঘূর্ণায়মান চেয়ার
- পুলি সিস্টেম
- সাউন্ডপ্রুফ রুম
যেখানে দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা, বৈদ্যুতিক শক, ওয়াটারবোর্ডিং – এভাবে চালানো হতো নির্যাতন। এমনকি জনসম্মুখে হাজির করার আগে নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টাও করা হতো।
গুম কমিশনের গঠন
২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্ত ও কী পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণে কাজ শুরু করে।
শেষ কথা
এই সমস্ত ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল রাজনৈতিক অধ্যায় নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ নিদর্শন। আজও সেই বন্দিশালা, সেই আয়নাঘর – ইতিহাসের পাতায় লুকানো এক ভয়ঙ্কর ‘ডার্ক রুম’, যেখানে মানুষের আর্তনাদ ঢেকে রাখে রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতার নির্মমতা।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন